অনলাইন ডেস্ক:
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলায় তানভীর দম্পতির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায় শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম।
মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তানভীর-জেসমিন আদালত কক্ষে বসে ছিলেন। তানভীর ছিলেন হুইল চেয়ারে বসা আর জেসমিন ছিলেন অন্য একটি বেঞ্চে বসা। দুজনকেই বিমর্ষ দেখা গেছে। রায় ঘোষণার পর এই দম্পতি গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে কোনো কথা বলেনি। এ ছাড়া মামলাটির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তানভীরের ভায়রা তুষার আহমেদও কারো সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জন হল, তানভীর মাহমুদ, তানভীর মাহমুদের স্ত্রী ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন
বিচারক ২৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, মামলাটির ঘটনা ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করেন। তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।
এ ছাড়া রায়ে আট আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় ২০১২ সালে হলমার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। মঙ্গলবার যে মামলার রায় হয়েছে, সেটি এই ১১টি মামলারই একটি।
দণ্ডিত বাকি আট আসামি হল, সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এই আটজনের মধ্যে জামাল উদ্দিনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আসামিদের মধ্যে জামাল উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন জামিনে রয়েছেন। আর পলাতক রয়েছেন সাইফুল ইসলাম, আবদুল মতিন, হুমায়ুন কবির, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেহেরুন্নেসা ও জাকারিয়া। কারাগারে আছেন তানভীর, তুষার,জেসমিনসহ অপর আটজন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নিয়েছেন। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগ গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।