অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রির মামলায় এবার কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছা: সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ। এ মামলায় কম্পিউটার অপারেটরসহ আরো ২৫-৩০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি ডিবির তালিকায় রয়েছে।
আজ রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গত ১ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরি এবং বিক্রির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ও একই প্রতিষ্ঠানের চাকুরীচ্যুত ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সহকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগ। তাদের দেওয়া তথ্য ও দেখানো মতে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র এবং শতশত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির বিশেষ কাগজপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করা হাজার হাজার সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার সদর থানা এলাকা হতে গড়াই সার্ভে ইন্সটিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা তিনজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাদের দেওয়া জবানবন্দি ও উদ্ধারকৃত বিভিন্ন ডিভাইস পর্যালোচনা করে ঘটনার সাথে জড়িত কামরাঙ্গীরচরের হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সরদার গোলাম মোস্তফা ওরফে মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ এপ্রিল মিরপুর থেকে, উত্তর যাত্রাবাড়ীর ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের (মেডিকেল) পরিচালক মোঃ মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে ১৯ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থেকে ও ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মোছাঃ সেহেলা পারভীনকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, শামসুজ্জামান ও তার ব্যক্তিগত সহযোগী ফয়সাল গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের অধিক জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বানিয়ে বিক্রি করেছে এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। ফলে ওয়েবসাইটে গিয়ে এগুলো খুঁজলে তা সঠিক পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। সিস্টেম এনালিস্ট বা কম্পিউটার অপারেটররা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে সংবেদনশীল এই কাজগুলো করবেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সংশোধনের তথ্য টাকার বিনিময়ে আদান-প্রদান করেছে কম্পিউটার অপারেটর ও সিস্টেম এনালিস্টদের কাছে। এ রকম প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপরায়ণ ২৫-৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ সিবিএ দালাল ,কর্মচারী, কর্মকর্তা, কম্পিউটার এবং পরিদর্শন শাখার কর্মকর্তা কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ফলাফল পরিবর্তন, নাম ঠিকানা পরিবর্তন, প্রার্থীদের বয়স পরিবর্তন ও অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট শিক্ষা বিটের কিছু সাংবাদিক এবং কিছু অনলাইন সাংবাদিককে মাসোহারা দিয়ে রিপোর্ট করাতো অথবা রিপোর্ট করার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো, যোগ করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।