শেরপুর সংবাদদাতা:
তথ্য চাওয়ায় এক সংবাদকর্মিকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে ভ্রাম্যমান দালত। সংবাদকর্মি শফিউজ্জামান রানা
শেরপুরের নকলা উপজেলায় জাতীয় দৈনিক দেশ রুপান্তরে কাজ করেন। সংবাদকর্মিকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর শনিবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিন। রানা নকলা পৌরসভার বাজারদী মহল্লার আলহাজ্ব লিয়াকত আলীর ছেলে।
রানার স্ত্রী বন্যা আক্তারের অভিযোগ, ৫ মার্চ মঙ্গলবার রানা তাঁর ছেলে শাহরিয়ার জাহান মাহিনকে (১৫) সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার কর্মচারী (সিএ) শীলার কাছে জমা দিয়ে রিসিভড কপি চেয়েছেন রানা। শীলা তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। রানা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার শীলার কাছে রিসিভড কপি চেয়েছেন।
তখন শীলা বলেন, ইউএনও ছাড়া রিসিভড কপি দেওয়া যাবে না। পরে রানা মোবাইল ফোনে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান। এতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে নকলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও ও সিএ শীলার সাথে অসদাচরণের অভিযোগে রানাকে গ্রেপ্তার করে। পরে ইউএনওর নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ ওই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শফিউজ্জামান রানাকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল আহসান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মেরাজ উদ্দিন, সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল ইসলাম হীরা, একাত্তর টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শাকিল মুরাদ, এখন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল খান সৌরভ, বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি নাঈম ইসলাম, নিউজ বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শাহরিয়ার শাকিল, প্রতিনিধি ফুয়াদ হোসেন, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন আহমেদ, বিজয় টিভি প্রতিনিধি ইউসুফ আলী মন্ডল, আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোশারফ হোসাইন প্রমুখ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ৫ মার্চ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি আমার অফিসে সার্বিক মনিটরিং কমিটির মিটিং করছিলাম। হঠাৎ বাইরে হট্টগোলের শব্দ পাই। ওই সময় আমার অফিসের সিএ শিলা আক্তার এসে আমাকে জানায়, রানা নামের এক সাংবাদিক রুমে এসে ফাইল চাচ্ছে। তখন মিটিংয়ে উপস্থিত জেলা পরিষদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন সেখানে গিয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন। তখন হট্টগোল আরও বেড়ে গেলে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফকে হট্টগোল থামাতে ডেকে পাঠাই। তিনি রানাকে নিভৃত করার চেষ্টা করেন। পরে সেখানে গিয়ে রানার সাথে কথা বলেন মিটিং উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনসুর। রানা তাঁর সাথেও খারাপ আচরণ করেন। তাঁকে ধাক্কা দেন। আমরা রানাকে ৩০ মিনিট সময় দিয়েছি সে যেন চলে যায়। কিন্তু সে চলে না যাওয়ায় একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত করতে তাৎক্ষণিক আমরা রানার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ ডেকে সহকারী কমিশনার শিহাবুল আরিফের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আমরা রানাকে অভিযুক্ত করে ছয মাসের দণ্ডাদেশ দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, রানার পরিবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপীল করে জামি চাইলে রানা জামিনে মুক্তি পেতে পারেন। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা অনতিবিলম্বে রানার মুক্তি চেয়েছেন।