বরগুনা ব্যুরো:
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে সেতু ভেঙে বৌভাতে যাওয়ার মাইক্রোবাস খালে পড়ে এখন পর্যন্ত ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের নাম পরিচয় জানা গেছে। তবে নিহতের ৭ জন নারী ও দুইজন শিশু। আরও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয়রা ধারণা করেছে। তবে ভাগ্যক্রমে ৫ মাসের এক শিশু বেঁচে গেছে। শনিবার বেলা ২টা এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মোহা: রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আবদুস সালাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস টিম মাইক্রোবাস ও নিখোঁজদের উদ্ধারের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাইক্রোবাসটি আমতলীর দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া হতে আমতলী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে বরের বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। স্বজনদের আহাজারীতে আমতলী হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল ভারী হয়ে উঠছে।
জানা গেছে, মাইক্রোবাসে করে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতেছিল কনে পক্ষ। ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই সেতুটি ভেঙে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭ জন নারী ও দুইজন শিশুর লাশ আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। নিহত ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ভাগ্যক্রমে ৫ মাসের এক শিশু বেঁচে রয়েছে।নিহতরা হলো,
১) মুন্নি বেগম ( ৪০), স্বামী – আবুল কালাম আজাদ ২) তাহিয়া (৭), পিতা- আবুল কালাম আজাদ ৩) তাসদিয়া (১১), পিতা- আবুল কালাম আজাদ ৪) ফরিদা বেগম (৫৫), স্বামী – মৃত ফকরুল আহমেদ ৫) রাইতি (৩০), স্বামী – সোহেল খান ৬) ফাতেমা আক্তার (৪০), স্বামী – বাবুল মাদবর ৭) রুমি বেগম (৪০), স্বামী – রফিকুল ইসলাম সর্ব সাং- ভদ্রাসন, থানা – শিবচর, মাদারীপুর ৮) জাকিয়া, স্বামী – জহিরুল ইসলাম, ৯) হৃদি (৫), পিতা- জহিরুল ইসলাম উভয় সাং- দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, আমতলী, বরগুনা।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন ও নাসির বলেন, মাইক্রোবাস ও অটোগাড়ীটি ব্রীজের মাঝখানের আসা মাত্রই ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষনিক আমরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
মাইক্রোবাসে থাকা সোহেল মিয়া বলেন, মাইক্রোবাসে কনে পক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়ীতে যাচ্ছিলাম।পথিমধ্যে হলদিয়া হাট ব্রীজের উঠামাত্রই ব্রীজ মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। আমিসহ ৩ জন সাতরে কিনারে উঠতে পেরেছি। পরে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
একই পরিবারের তিন নিহতের স্বজন আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার কিছুই রইলো না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেল। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন জানান, সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মাইক্রোবাসটি এখনো পানির নিচে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। নিখোঁজদের উদ্ধার করতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছেন। আমতলী পৌর মেয়র মো: মতিয়ার রহমান আমতলী হাসপাতালে নিহতদের স্বজনদের শান্তনা দিয়ে বলেন, মরদেহ দাফন কাফনের সব ব্যবস্থা তিনি করবেন। বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, যারা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তাদের দ্রুত উদ্ধার করা এবং মাইক্রোবাস উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, এমন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। আমি সমবেদনা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। স্বজনদের সান্তনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি আজ ঢাকা রওনা দিয়েছি। এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কথা শুনে আপনাদের মাঝে ছুটে এসেছি। আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও সাহেবকে বলেছি নিহতদের দাফন কাফনের প্রক্রিয়া দ্রুত যেন করেন। আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি। তিনি বলেন, ব্রীজটি এতদিন ঝুকিপূর্ণ ছিল। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের একটি সাইনবোর্ড থাকা উচিৎ ছিল। আমি প্রশাসনকে তদন্তের নির্দশনা দিয়েছি। এ ছাড়া নিহতদের স্মরণে শোক জানিয়েছেন, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর কবীর।