বরগুনা ব্যুরো
বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা ও দখল চেষ্টার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার বেলা ১১ টায় বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে ঘন্টা ব্যাপি এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আইনজীবী, বরগুনার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সংবাদকর্মী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে যারা দখল করার চেষ্টা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
মানববন্ধনে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, অপসংবাদিকতা রোধে যখন বরগুনা প্রেসক্লাব সোচ্চার, ঠিক সেই মুহূর্তে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা করেছে। এ ঘটনায় প্রেসক্লাবের যেসব সদস্য আহত হয়েছেন আমি তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বরগুনা প্রেসক্লাব আমরা দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। তাই আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের একটাই দাবি অতি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার চাই। আমরা ১৯ ফেব্রুয়ারীর ঘটনায় ২৯ ফেব্রুয়ারী দ্রুত বিচার আদালতে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে আমারা কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, মানববন্ধনের মত একটি শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করলে আমরা এর থেকেও কঠোর কর্মসূচি দেব। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তবুও বরগুনা প্রেসক্লাবের সম্মান বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হতে দেবো না। প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে আমাদের সহকর্মীদের আহত করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ফেসবুকে প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে একপেশে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
বরগুনা প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে দখলের চেষ্টা চালায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এ ঘটনায় আহত হন বরগুনা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ফেরদৌস খান ইমন ও সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম মিরাজসহ ৭ জন সংবাদকর্মী। পরে এ ঘটনায় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জনকে অভিযুক্ত করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে বরগুনা প্রেসক্লাব।
বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আবদুর রশিদ বলেন, বরগুনা প্রেস ক্লাবে ১৯ ফেব্রুয়ারী যারা হামলা করে দখল করার চেস্টা করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি কামনা করি। তিনি বলেন, মুশফিক আরিফ বরগুনার ভদ্র ও সম্মানিত মানুষকে ফেইসবুক মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপমান করে যাচ্ছে। মুশফিক আরিফের হাত থেকে কোনো মানুষ রক্ষা পায়নি। তিনি আরও বলেন, মুশফিক আরিফ সারাদিন অপকর্ম করে বেড়ায়। তিনি যে বাসায় থাকেন তাও সরকারী খাস জমি। তার কোন কাজ নেই। সারাদিন ফেইসবুক মাধ্যমে ভদ্র লোকের অপমান করাই হচ্ছে এখন তার কাজ।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সঞ্জিব কুমার দাস বলেন, ৪৭ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবের। সেই ইতিহাস একদিনে মুছে ফেলা যাবে না। বরগুনা প্রেসক্লাবে যারা বিগত দিনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কথা তিনি স্মরণ করে বলেন, মরহুম আবুল কালাম আজাদ, নুর মোহাম্মদ মাস্টার, আবদুল আলীম হিমু, স্বপন দাস। তারা আজ নেই, কিন্তু প্রেসক্লাব রয়েছে। আমরাও এাদিন থাকব না। প্রেসক্লাব থাকবে। নতুনরা আসবে। এখানে দখল মারধর করার কিছু নেই। তিনি বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাব জেলার সামাজিক কাজগুলো করে থাকে। অসহায় মানুষের পাশে সব সময় দাড়ায়। তিনি বলেন, আমরা কোলকাতা গেছি একটি সমস্যা নিয়ে। বরগুনারসহ দেশের ২২১ জন মৎস্য জেলে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি। অথচ আমাদের হাই কমিশনার জানেন না। আমরা বরগুনার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করে ভারতে হাই কমিশনারের কাছে দিয়েছি। সিডরের সময় বরগুনা প্রেসক্লাব জনগণের পাশে ছিল। এ ভাবে বরগুনা প্রেসক্লাব সামাজিক কাজ করে থাকে। তিনি বলেন, আমিও এই প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার হয়েছি। আবার তিনবার সভাপতি হয়েছে। সব কিছু হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। যোগ্যদের জন্য প্রেসক্লাব উম্মুক্ত। যারা ১৯ ফেব্রুয়ারী প্রেসক্লাবে এসে দখল করতে চেয়েছিল, হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। আমাদের বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত তাদের গ্রেফতার করবেন।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও দৈনিক সমকালের বরগুনা জেলা প্রতিনিধি আবু জাফর মোঃ সালেহ বলেন, প্রেসক্লাবে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমরা একটি মামলা দায়ের করেছি। আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা একটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গ্রেফতারের দাবি করছি। এই মামলায় যারা অভিযুক্ত হয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি।
অ্যাডভোকেট এম. মজিবুল হক কিসলু বলেন, ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাব নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদেরকে ধিক্কার জানাই। এ প্রেসক্লাবের একটি গঠনতন্ত্র আছে। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসক্লাব পরিচালিত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে যে ন্যাক্কারজনক ভাবে যারা হামলা করেছে তাতে পুরো বাংলাদেশের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনে যদি কেউ এই ভাবে হামলা চালিয়ে দখল করার চেষ্টা করে এর থেকে ঘৃণিত কাজ আর কিছু হতে পারে না। তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারীর ঘটনায় অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, তিনি সেদিন জীবনকে বাজি রেখে দখলদারদের হাত থেকে বরগুনা প্রেস ক্লাবকে রক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অন্যের সংবাদ পরিবেশন করে। আজ নিজের পোস্টমর্টেম নিজের করতে হচ্ছে। নিজের সংবাদ নিজের করতে হচ্ছে। এর চেয়ে দু:খজনক আর কী হতে পারে। এত কিছুর পরেও প্রেস ক্লাব আলোচনায় বসতে চেয়েছে। দেখা গেল একটি চক্র ফেইসবুক মাধ্যমে একের পর এক প্রেসক্লাব নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করে প্রেসক্লাবের ঐতিহ্য নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারনে মামলা হয়েছে।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ মাইনুল হোসেন বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের নিন্দনীয় হামলার ঘটনা শুধু সাংবাদিক সমাজের জন্য নয়, শুধু প্রেসক্লাবের জন্য নয়, পুরো বরগুনাবাসীর জন্য এটি একটি কলঙ্কিত ইতিহাস। ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলার মত এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমি আর কোনদিন শুনিনি। যারা এই দুঃসাহস দেখিয়েছে। যারা এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। অতি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য দাবী জানাই।