বরগুনা ব্যুরো
বরগুনা প্রেসক্লাবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালুকদার মাসউদকে বেধড়ক মারধর করে বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্যরা। ১৩ দিন চিকিৎসার পরে শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। আজ রোববার বিকালে মরহুমের প্রথম জানাজা বরগুনার পৌর মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তালুকদার মাসউদ একজন ইউপি সদস্য ও নলটোনা ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের মৃত্যু আবদুল ওহাব মাস্টারের ছেলে। কাজ করেছেন দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকায়।
জানা যায়, তালুকদার মাসউদ ১৯ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় সাংবাদিক মুশফিক আরিফ, মিজানুর রহমান ও হারুন রহ রশিদ রিংকুর সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে ক্যারাম খেলতে যায়। একটু পর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক সোহেল হাফিজ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে তাদের আগমন বিষয় জানতে চায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে যান তারা। ধীরে ধীরে প্রেসক্লাবের সদস্যরা আসতে থাকেন। কথা কাটাকাটিতে উত্তেজিত হয় উভয় পক্ষ। শুরু হয় মারধর। মারধরে এক পর্যায় তালুকদার মাসউদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পরে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। দ্রুত তালুকদার মাসউদকে এ্যাম্বুলেন্সে প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। বরগুনার চিকিৎসক মাসউদকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বরিশাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে প্রেরণ করেন। মাসউদ একটু সুস্থ হলে তাকে বরগুনার বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। শনিবার আবার অসুস্থ হলে মাসউদকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাত ১১ টায় মাসউদ মৃত্যু বরণ করে।
মাসউদের মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বলেন, আমার বাবাকে বরগুনা প্রেস ক্লাবের সদস্য সোহেল হাফিজ, ইমন, মুরাদ, কাশেম, সাইফুল মিরাজসহ অসংখ্য লোকজন প্রেসক্লাবের তালা বন্ধ করে মারধর করে ফ্লোরে ফেলে রাখে। আমি ও আমার মা সংবাদ পেয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাবে ছুটে যাই। আমার বাবা জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে আমাকে বাঁচাও। তারপরও তারা আমার বাবাকে হাসপাতালে নিতে দেয় না। পরে পুলিশ এসে আমার বাবাকে প্রেসক্লাব থেকে উদ্ধার করে এ্যামাবুলেন্সে তুলে বরগুনা সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও তারা বাধা দেয়। ১৯ তারিখে প্রেসক্লাবের সদস্যরা আমার বাবাকে মারধর করে হত্যা করে। আমরা এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
তালুকদার মাসউদের কিশোরী মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি অপর এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সবার ইচ্ছে পূরণ করে আমার বাবাটা মইরা গেছে।
আবার লেখছে, আমাদের এই শোকের ভার কে নিবে। কার কাছে চাইব এর বিচার। এই অল্প বয়সে আমাদেরকে এতিম করে চলে গেছে আমার বাবা। কেহ জিজ্ঞেস করলে কেমনে বলব আমার বাবা নেই। এত কস্ট কেমনে সইব। আল্লাহ একটু ধৈর্য ধরতে সাহায্য করুন। আর পারছি না।এ ব্যাপারে সোহেল হাফিজ বলেন, তালুকদার মাসউদ, মুশফিক আরিফসহ কয়েকজন মিলে প্রেসক্লাব দখল করতে এসেছিল। তালুকদার মাসউদ, মুশফিক আরিফসহ বহিরাগতরা আমাদের সদস্যদের মারধর করেছে। আমরা ২৯ ফেব্রুয়ারী তালুকদার মাসউদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছি। আমরা তালুকদার মাসউদকে মারধর করিনি। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করেছে। সদস্যদের মারধর করেছে। তালুকদার মাসউদ আগে থেকে হার্টের রোগী। আমাদের ধারনা তিনি হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার জন্য আমাদের দোয়া রইল। বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো: মিজানুর রহমান বলেন, আমি শুনেছি তালুকদার মাসউদ মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত থানায় কেহ মামলা করতে আসেনি। তালুকদার মাসউদের অকাল মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু। তিনি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মাসউদ তালুকদার একজন জনপ্রতিনিধি। আমি যতদূর জানি দুইবার ইউপি সদস্য হয়েছেন। তার যথেস্ট সুনাম ছিল। আমি তার মেয়ের স্ট্যাটাস দেখেছি। অত্যান্ত হৃদয় বিদারক। এমন একটি মৃত্যু কারো কাম্য নয়।