কাবেরী চ‍্যাম্প জাতের সূর্যমুখী আবাদে স্বপ্ন বুনছেন বরগুনার কৃষকরা

BanglaPost21

বরগুনা ব্যুরো:
হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই এই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বরগুনায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে।

পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

পুষ্টিবিদদের মতে সূর্যমুখীর ভোজ্য তেল ও সব ধরনের সবজির সঙ্গে খাওয়া যায়। পুষ্টিমান অনেক অনেক গুণে বেশি। এটি কোলেস্টেরলমুক্ত তেল। এছাড়া সর্ষে বাটার মতো করে সূর্যমুখী ফুলের দানা খাওয়া যায়।

সূর্যমুখী গ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে। সূর্যমুখীর চাষে কোন ঝুঁকি নেই। চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। মূলতঃ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। একর প্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।

সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর বিশাল গাছগুলো জমিতে পঁচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলায় এবছর তিন হাজার ৯শত ৫৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে জমিতে তেল বীজ উৎপন্ন হয় গড়ে ১.৫ টন । এদিকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও কৃষি মন্ত্রনালয় কৃষি প্রনোদনার কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের তেল উৎপাদন বৃদ্ধি ও স্বয়ং সম্পূর্ন করার লক্ষে কৃষকদের মাঝে বঙ্গ এগ্রিটেক লিমিটেডর হাইব্রিড কাবেরী চ্যাম্প জাতের বীজ থেকে ৪০-৪৫ % পরিমাণ তেল উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

সূর্যমুখী চাষ নিয়ে কৃষক জাকারিয়া জানান, আমি গত কয়েক বছর যাবত সূর্যমুখী চাষ করছি তবে এ বছর কাবেরী চ্যাম্প জাতের বীজে গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ ভালো ফলন হয়েছে ।আমি আশাবাদী গত কয়েক বছরের থেকে আমি বেশি লাভবান হব। এক একটি ফুলের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়েছ। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় আমাদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

অন এক কৃষক বশির জানান, এ বছর আমি এক একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। গত কয়েক বছরে তুলনায় বছরের ফলন আমার বেশ ভালো হয়েছে। এই কাবেরী চ্যাম্প জাতের বীজে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। আমি আশাবাদী এ বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আমার লাভ হবে।

উপ সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ জাকারিয়া হোসেন এ বছর সূর্যমুখী চাষাবাদ নিয়ে বলেন জানান, বরগুনার আবহাওয়া সূর্যমুখী অনুকুল হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখি চাষে ঝুকছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় বরগুনায় এ বছর বেশ ভালো সূর্যমুখি চাষ হয়েছে। তবে এই বঙ্গ এগ্রিটেক লিমিটেড এর কাবেরী চ্যাম্প জাত হাইব্রিড বীজ চাষ করে কৃষকরা বেশ ভালো ফলন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় মাঠে কৃষকদের সূর্যমুখী চাষের উৎস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।

বঙ্গ এগ্রিটেক লিমিটেডের রিজনাল ম্যানেজার রুদ্র দেব চক্রবর্তী বলেন, এ বছর আমরা আমাদের কোম্পানির কাবেরী চ্যাম্প জাতের হাইব্রিড বীজ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ও কৃষি মন্ত্রনালয় কৃষি প্রনোদনার কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছি। কৃষকরা এই জাতের বীজ চাষাবাদ ব্যাপক ভালো ফলন পেয়েছেন । আমাদের এই জাতের বীজ থেকে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগই তেল উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাতে করে কৃষকরা অধিক পরিমাণে লাভবান হবে।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ভ. আবু সৈয়দ মোঃ জোবায়দুল আলম জানান, নতুন লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে প্রেরণা যোগাতে মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজ চলছে।